নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থী এবং পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের ফলপ্রসু সভায় আন্দোলন প্রত্যাহার করেছে উভয় পক্ষ। শিক্ষার্থীরা তাদের মহাসড়ক অবরোধ কর্মসূচী এবং পরিবহন মালিক শ্রমিকরা তাদের ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়। এর ফলে চলমান অচলাবস্থার নিস্পত্তি হলো এবং সব পক্ষ এই সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখবেন বলে প্রত্যাশা করেন উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. ছাদেকুল আরেফিন। বুধবার সকাল সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের সভাকক্ষে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী এবং পরিবহন মালিক-শ্রমিক প্রতিনিধিদের সাথে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, মেট্রো পুলিশ প্রশাসন, জেলা প্রশাসন এবং নগরীর রূপাতলী হাউজিং সোসাইটি নেতৃবৃন্দের রুদ্ধদ্বার সভা শুরু হয়। প্রায় ২ ঘণ্টার সভায় শিক্ষার্থীরা তাদের উপর গভীর রাতে হামলকারীদের গ্রেফতার এবং পূর্ণ নিরাপত্তা প্রদানের দাবি পুনর্ব্যক্ত করেন। অপরদিকে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা রুটে তাদের পরিবহনগুলো নির্বেঘ্নে চলাচলের নিশ্চিয়তা এবং গ্রেফতার দুই শ্রমিকের মুক্তির দাবি জানান। সভায় মেট্রোপুলিশের উপ-কমিশনার মো. মোকতার হোসেন শিক্ষার্থীদের উপর হামলকারীদের দলমত নির্বিশেষে চিহ্নিত করে গ্রেফতার এবং তাদের পূর্ণ নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেন। অপরদিকে মালিক শ্রমিকদের দাবির প্রেক্ষিতে পুলিশ প্রশাসন গ্রেফতারকৃত দুই শ্রমিকের মুক্তি এবং রুটে তাদের বাস চলাচল নির্বিঘ্ন করার প্রতিশ্রুতি দেন। এর পরিপেক্ষিতে সভা শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি ফজলুল হক রাজিব তাদের চলমান মহাসড়ক অবরোধ কর্মসূচী প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। তবে ফের যে কোন ধরণের শিক্ষার্থী নির্যাতনের বিরুদ্ধে সকলকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান তিনিসহ অন্যান্যরা। সভা শেষে বরিশাল জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সুলতান মাহমুদ বলেন, শিক্ষার্থীদের সাথে তাদের কিছু শ্রমিকের কিছু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিলো। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, জেলা প্রশাসন এবং পুলিশের প্রশাসনের উপস্থিতিতে সমঝোতা সভায় শিক্ষার্থীদের সাথে শ্রমিকদের ভুল বোঝাবুঝির অবসান হয়েছে। গ্রেফতার দুই শ্রমিকের মুক্তির ব্যাপারে পুলিশ প্রশাসনও সহযোগীতা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সভায় সন্তোষজনক আলোচনার প্রেক্ষিতে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের বাস ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়েছে। মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার মো. মোকতার হোসেন জানান, আন্দোলতরত শিক্ষার্থী এবং পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের সব দাবি মেনে নেয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের উপর হামলকারীরা যে দল মতের হোক না কেন তাদের শনাক্ত করে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। গ্রেফতার দুই শ্রমিকের মুক্তির বিষয়ে পুলিশ আইনগত সহায়তা দেবে। একই সাথে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং রুটে নির্বিঘ্নে পরিবহন চলাচলের ব্যবস্থা করবে পুলিশ। ওই সভার পর থেকে শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক অবরোধ এবং পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের ধর্মঘট কর্মসূচীর অবসান হলো বলে তিনি জানান। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. ছাদেকুল আরেফিন জানান, উভয় পক্ষের সব দাবি পুলিশ প্রশাসন মেনে নিয়েছে। দুই পক্ষ তাদের চলমান কর্মসূচী প্রত্যাহার করেছে। এই সভার মধ্য দিয়ে দুই পক্ষের চলমান সমস্যা নিরসন হয়েছে। সব পক্ষকে এই সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রযাত্রায় সকলের সহযোগিতা কামনা করেন উপাচার্য। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি রাতে নগরীর রূপাতলী হাউজিংয়ের বিভিন্ন মেসে ঢুকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ২০জন শিক্ষার্থীকে নির্যাতন করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় দুই শ্রমিককে গ্রেফতার করে পুলিশ। নির্যাতনকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক অবরোধ কর্মসূচী এবং গ্রেফতার দুই শ্রমিকের মুক্তির দাবিতে মালিক-শ্রমিকরা বাস ধর্মঘটের ডাক দেয়। বরিশালের চরমোনাই মাহফিলের কারণে উভয় পক্ষ তাদের কর্মসূচী স্থগিত করে। গতকালের ফলপ্রসু সভায় উভয় পক্ষ তাদের কর্মসূচী প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়।
Leave a Reply